Skip to main content

বাংলার আদি ধর্ম ও সংস্কৃতি

নমস্কার গৌড়ীয় সেনা বলছি..

সম্প্রতি বাংলা ভাষা ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাঙালি জাতি বাংলা ভাষার থেকেও অনেক প্রাচীন। অনেকে প্রাচীন বঙ্গকেই আজকের বাংলা বলে ভুল করেন। আসলে, প্রাচীন অঙ্গ, বঙ্গ, পুণ্ড্র, এবং সুমহ এই চারটি প্রদেশ মিলে বর্তমান বঙ্গ বা বাংলার গঠন হয়। মহাভারতের পরবর্তী সময়ে গৌড় প্রদেশের উত্থান ঘটে বঙ্গে। সেন শাসনের পূর্বে কোনও বঙ্গীয় শাসক "বঙ্গাধিপতি" উপাধি নিয়েছেন বলে শোনা যায় না; বরং তাঁরা "গৌড়াধিপতি" বা "গৌড়েশ্বর" উপাধি গ্রহণ করতেন।


এবার আলোচনা করা যাক প্রাচীন বাঙলার এই অঙ্গ, বঙ্গ, পুণ্ড্র, এবং সুমহ প্রদেশগুলোর উৎপত্তি নিয়ে। মহাভারত অনুসারে, অঙ্গ, পুণ্ড্র এবং সুমহ ঋষি দীর্ঘতমসের পুত্র। তাদের নামানুসারে এই অঞ্চলগুলোর নামকরণ হয়, এবং তাদেরকে সূর্যের মতো তেজস্বী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষভাবে পুণ্ড্রকে ঋষি বিশ্বামিত্রের অভিশপ্ত পুত্র বলা হয়। মহাভারতের "সভাপর্বে" বাঙালীদের ক্ষত্রিয় শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। তাম্রলিপির যোদ্ধারা আবার হাতির যুদ্ধে পারদর্শী ছিলেন।


বাংলার আদি এবং শেকড় সনাতন ধর্মের আচার-সংস্কৃতিতে প্রোথিত। নীহাররঞ্জন রায়ের মতো ঐতিহাসিকরা, যাঁরা আর্য আক্রমণ তত্ত্বকে সমর্থন করেন, তাঁরাও স্বীকার করেছেন যে, নীল ষষ্ঠী, চড়ক, এবং শিবপূজা প্রভৃতি আচার মূলত অনার্য সংস্কৃতির অংশ ছিল যা পরবর্তীকালে আর্য হিন্দুরা গ্রহণ করে। 


পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুসারে বাংলার আদি ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়। যদিও কিছু ঐতিহাসিক বাংলার আদি ধর্মকে জৈনধর্ম বলে ধারণা করেছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। বৌদ্ধ ধর্মের প্রথম চিহ্নও বাংলায় মাত্র ১৬০০-১৮০০ বছর আগের। সাঁচি বৌদ্ধ স্তূপে প্রায় ২২০০ বছর আগের এক শিলালিপিতে পুণ্ড্র অঞ্চলের মানুষের কথা উল্লেখ থাকলেও, তাতে তাদের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ার কোনও তথ্য নেই। সেখানে ঋষিনন্দন নামে এক ব্যক্তির উল্লেখ আছে, যা মূলত সনাতনী নাম।


আশির দশকে গুজব ছড়িয়েছিল যে মহাস্থান শিলালিপিতে থেরবাদী বৌদ্ধদের রাজার দানের কথা লেখা আছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে সেখানে কেবল স্থানীয় কোনও জনজাতি বা "সংবঙ্গীয়" নামের একটি স্থানের কথা বলা হয়েছে, ধর্মের উল্লেখ সেখানে নেই।

বাংলার ক্ষেত্রে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মহাস্থানগড়ের (এখন বাংলাদেশের বগুড়া) শিলালিপি মিলেছে। তাতে ব্রাহ্মী লিপিতে সংবঙ্গীয় (সম্যক রূপে বঙ্গীয়) শব্দটি তাৎপর্যবাহী বলে ধরছেন গবেষকেরা

বাংলায় সনাতন ধর্মের প্রাচীনতার প্রমাণ প্রচুর পরিমাণে মেলে। গুপ্ত যুগ থেকে অগ্নিহোত্র যজ্ঞের উল্লেখ বাংলায় পাওয়া যায়। বাংলায় প্রায় ১৯০০ বছরের প্রাচীন কার্তিকের বিগ্রহ এবং প্রায় ১৭০০ বছরের প্রাচীন দুর্গা ও বিষ্ণুর বিগ্রহ পাওয়া যায়। 


বাংলার দুটি প্রধান পুরাতাত্ত্বিক স্থান চন্দ্রকেতুগড় এবং ওয়ারি-বটেশ্বরে সনাতন ধর্মের প্রাচীন প্রমাণ পাওয়া গেছে। আইআইটি খড়গপুরের গবেষণা অনুসারে প্রাচীন তথা পূর্ব মোর্য যুগের চন্দ্রকেতুগড় ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুসারী ছিল। বাংলাদেশের পুরাতত্ত্ববিদেরা ওয়ারি-বটেশ্বরের খননে নন্দীপদ এবং স্বস্তিকা চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন, যা নিশ্চিতভাবে হিন্দু ধর্মকে বাংলার আদি সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করে।

অনেক ঐতিহাসিক আর্য আক্রমণ তত্ত্ব মেনে নিলেও, তাঁরাও স্বীকার করেন যে হিন্দুরাই বাংলার আদি সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছেন। এমনকি স্বামী বিবেকানন্দ আর্য তত্ত্বকে ভ্রান্ত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর যুক্তির বিরোধিতা বিশেষ কেউ করতে পারেননি। 

আজকের বাংলার সংস্কৃতি আরব ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের করাল গ্রাসে আক্রান্ত। বাংলার আসল শেকড় প্রোথিত রয়েছে সেই প্রাচীন ঋষিদের যজ্ঞ এবং সূর্যনারায়ণের পূজায়। এই সনাতন ও চিরস্থায়ী শক্তিকে বাঙালির মন থেকে কোনও শক্তিই মুছে ফেলতে পারবে না।

এই সংক্রান্ত সকল প্রমাণ পেতে:

Part 1

Part 2



Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গে রামনবমী

প্রায় কিছু বৎসর পূর্ব হইতে দেখছি যীশু-পূজা, রমজান, ঈদ পালন করা কলকাতার বাবুগণ রামনবমী পালন হতে দেখিলে ত্রাহি ত্রাহি রব তোলেন। অবশ্য এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে—রামের প্রভাব বাড়িলে তাঁদের বেল্লাপনা বন্ধ হইবে। বঙ্গীয় সংস্কৃতির উপর আরব ও ইউরোপীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধ হবে। কিন্তু সরাসরি ভারত সম্রাটের বিরোধিতা করিলে, পাছে বাঙালি ক্ষেপে গিয়ে জুতোপেটা করে, তাই ভয়ে ভয়ে এখন বলছে—"রামনবমী বাংলার সংস্কৃতিতে ছিল না, বাঙালি এই অবাঙালি আগ্রাসন মানবে না…" ইত্যাদি ইত্যাদি। কেহ কেহ আবার হুতুম পেঁচার নকশা হইতে দেখাইতেছেন রামলীলাকে খোট্টা উৎসব বলে। তাঁরা লিখছেন—বাঙালির রাম বলতে রামমোহন ও রামকৃষ্ণ। এদের মতো নিরেট মাথামোটা বিশ্বভ্রমণ করলেও অল্পই মিলবে। রামমোহন নিজ পত্রের অন্তে পরিচয় হিসাবে নিজেকে "শ্রী রামের দাস" হিসেবে উল্লেখ করেন। আর রামকৃষ্ণ ঠাকুরের কুলদেবতা তো স্বয়ং রঘুবীর। এসব নয়, পরে আলোচনা করা যাবে। আগেও বহুবার বলেছি—কলকাতার বাবুদের বাংলা সম্পর্কে ধারণা কম। তাই Xmas বাঙালির উৎসব আর রামনবমী অবাঙালি হয়ে যায়! মেদিনীপুর, বীরভূম প্রভৃতি জেলায় বহু ৩০০-৪০০ বছর পুরোনো রাম মন্দির( আরও জানতে )দে...

বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য: আর্য-অনার্য বিতর্কের ঐতিহাসিক সত্য

প্রাচীন শাস্ত্র ও ঐতিহাসিক দলিলে বারবার "বঙ্গ" শব্দের উল্লেখ থাকলেও "বাংলা" শব্দটি অনুপস্থিত। নাম নিয়ে অনেকের ধারণা থাকতে পারে, "নামে কী বা আসে যায়?" কিন্তু এখানে নামের গুরুত্ব ঐতিহাসিক সত্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ঐতিহাসিক প্রমাণ অনুযায়ী, প্রাচীন বঙ্গ আজকের সম্পূর্ণ বাংলা অঞ্চলকে নির্দেশ করে না। মহাভারতের যুগে তমলুক, পুণ্ড্র এবং অঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রাচীনকালে বঙ্গ একটি স্বতন্ত্র ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক সত্তা ছিল, যা আজকের বাংলার সঙ্গে পুরোপুরি একীভূত নয়। দাবির বিশ্লেষণ: বঙ্গ কি অনার্য ভূমি? অনেকে দাবি করেন যে, বাঙালায় বাইরের কেউ এলে তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো, কারণ বঙ্গ অনার্য ভূমি। এই তথ্য বৌধ্যায়ন ধর্মসূত্রে পাওয়া যায়। কিন্তু এখানেই বিভ্রান্তি রয়েছে।  "কারণ বঙ্গ অনার্যভূমি" এই উল্লেখ নেই। ওটা বামপন্থীদের কল্পনা। বৌধ্যায়ন ধর্মসূত্রে যা বলা হয়েছে, তা ব্রাহ্মণদের জন্য প্রযোজ্য: [শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ বলেছি তার কারণ হলো, পরবর্তীতে অনেক রাজা বঙ্গের রাজাদের সাথে যুদ্ধে, বিবাহ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এসেছিলেন। তারা প্রা...

আর্যাবর্তের প্রকৃত সংজ্ঞা: শাস্ত্র কি বলে?

একসময় যে বাংলায় রঘুনাথ স্মার্তি ও মধুসূদন সরস্বতীর মতো শাস্ত্রজ্ঞানীরা বিরাজমান ছিলেন, সেই বাংলায় আজ হিন্দু ধর্ম নিয়ে নানা মিথ্যাচার চলছে। এটা চলতে পারার মূলত দুটো কারণ রয়েছে। এক, গ্রামের শাস্ত্রজ্ঞানী ব্রাহ্মণরা সামাজিক মাধ্যম চালাতে জানেন না। দুই, বিগত ৪০ বছরের নাস্তিক শাসন হিন্দুদের থেকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ কেড়ে নিয়ে সেগুলো চরম হিন্দুবিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছে। তবুও, পরম্পরাগত হিন্দুরা আবার নিজেদের জায়গা করে নিতে শুরু করেছে। আজকের আলোচনার বিষয় আর্যাবর্তের সীমারেখা। নানা সময়ে বিতর্কে দেখেছি, এই আর্যাবর্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তথাকথিত ডানপন্থী হিন্দুরা হয় অস্বস্তিতে পড়েন, নয়তো এড়িয়ে যান। স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেন না। দেখুন, শাস্ত্রে আর্যবর্তের তিন প্রকার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমি একে একে বলছি: ১.মনুস্মৃতির দ্বিতীয় অধ্যায়ের বাইশতম শ্লোকটি দেখুন।এই শ্লোক অনুযায়ী, আজকের পুরো ভারতই আর্যাবর্ত। শুধু তাই নয়, বশিষ্ঠ ধর্মসূত্রের (1.9) প্রথম অধ্যায়ে মনুস্মৃতির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। বশিষ্ঠ ধর্মসূত্রে বলা হয়েছে যে হিমালয়ের দক্ষিণ পর্যন্ত আর্যাবর্ত প্রসারিত।(বাংলা হিমালয়ের দক...