প্রায় কিছু বৎসর পূর্ব হইতে দেখছি যীশু-পূজা, রমজান, ঈদ পালন করা কলকাতার বাবুগণ রামনবমী পালন হতে দেখিলে ত্রাহি ত্রাহি রব তোলেন।
কিন্তু সরাসরি ভারত সম্রাটের বিরোধিতা করিলে, পাছে বাঙালি ক্ষেপে গিয়ে জুতোপেটা করে, তাই ভয়ে ভয়ে এখন বলছে—"রামনবমী বাংলার সংস্কৃতিতে ছিল না, বাঙালি এই অবাঙালি আগ্রাসন মানবে না…" ইত্যাদি ইত্যাদি। কেহ কেহ আবার হুতুম পেঁচার নকশা হইতে দেখাইতেছেন রামলীলাকে খোট্টা উৎসব বলে। তাঁরা লিখছেন—বাঙালির রাম বলতে রামমোহন ও রামকৃষ্ণ।
এদের মতো নিরেট মাথামোটা বিশ্বভ্রমণ করলেও অল্পই মিলবে।
রামমোহন নিজ পত্রের অন্তে পরিচয় হিসাবে নিজেকে "শ্রী রামের দাস" হিসেবে উল্লেখ করেন।
আর রামকৃষ্ণ ঠাকুরের কুলদেবতা তো স্বয়ং রঘুবীর।
এসব নয়, পরে আলোচনা করা যাবে।
আগেও বহুবার বলেছি—কলকাতার বাবুদের বাংলা সম্পর্কে ধারণা কম। তাই Xmas বাঙালির উৎসব আর রামনবমী অবাঙালি হয়ে যায়!
মেদিনীপুর, বীরভূম প্রভৃতি জেলায় বহু ৩০০-৪০০ বছর পুরোনো রাম মন্দির(আরও জানতে)দেখা যায়। সেখানে রামনবমী বহু পূর্ব হতেই পালিত হয়ে আসছে।
বাংলায় হিন্দুদের উৎসব ও আচারের বিধি যেভাবে মেনে হয়, সেই স্মার্ত রঘুনন্দনের অষ্টবিশতিতত্ত্ব স্পষ্টভাবে বাংলায় রামনবমী উদযাপনের কথা উল্লেখ করেছে।
এই পদ্ধতিতেই বাংলায় দুর্গাপূজা হয়।
শুধু স্মার্ত পরম্পরার বাঙালিরাই নয়, বৈষ্ণব বাঙালি সাহিত্যে বাংলায় রামনবমী উদযাপনের উল্লেখ রয়েছে।
শ্রী হরিভক্তি বিলাস-এর ১৩ ও ১৪ বিলাসে রামনবমী উদযাপনের সমস্ত পদ্ধতি, তিথি ও মাহাত্ম্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
এ থেকেই স্পষ্ট—বাংলায় রামনবমী বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল।
সন্ধ্যাকার নন্দী থেকে কীর্তিবাসী রামায়ণ—উভয়ই বঙ্গ বিখ্যাত।
বাংলার পটচিত্র রামায়ণ বিশ্ববিখ্যাত।
গিরিশচন্দ্র ঘোষের রাবণবধ নাটক বঙ্গবিখ্যাত।
"জয় শ্রী রাম" গর্জন শুনে যেমন রাবণের হৃদয় কেঁপে উঠেছিল, তেমনই বাংলায় থাকা ধর্মবিরোধীদের "জয় শ্রী রাম" শুনে বুক কাঁপছে!
কাঁপুক…
"শুনেছি আবার, শুনেছি আবার
রাম রঘুপতি লয়ে রাজ্যভার।
শাসিতেন হায়, এ ভারতভূমি—
আর কি সে দিন আসিবে ফিরে?"
...... রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Comments
Post a Comment