Skip to main content

বাংলা মানেই বৈদিক উত্তরাধিকার

নমস্কার, গৌড়ীয় সেনা বলছি।  

সামাজিক মাধ্যমে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ল, কলকাতার এক মোটা বাবুর চটকা বক্তব্য।  


বাবুটি বলছেন — “বাঙালিরা আর্য নয়, রমেশচন্দ্র মজুমদার নাকি এমনই বলেছিলেন।”  

শো হোস্টও কোনো উল্টো প্রশ্ন না করে সায় দিল — “ও, তাই!”  

বাবুটি তার বক্তব্য শেষ করলেন এই বলে, “তাই নাকি বৈদিক সাহিত্যে বাঙালির কোনো উল্লেখই নেই।”  

চলুন বাবুটিকে একটু পড়াশোনা করাই, মনে হয় চোখে হাই পাওয়ারের চশমা দরকার, তাই পড়তে পারেননি ঠিকমতো।  

প্রথমে আসি — বাঙালি কারা?  

যারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন?  

উত্তর হলো — না।  

বাঙালি হলেন মহারাজ বঙ্গের উত্তরাধিকারী।

এ মহারাজ বঙ্গ কে?  

ঋষি দীর্ঘতামসের আশীর্বাদে চন্দ্রবংশীয় মহারাজ বলীর পুত্র বঙ্গ — এই তথ্য মহাভারত-এ স্পষ্টভাবে লেখা আছে।  

শুধু তাই নয়, পুণ্ড্র অঞ্চলের মানুষদের ঐতেরেয় ব্রাহ্মণ গ্রন্থে ঋষি বিশ্বামিত্রের পুত্র বলা হয়েছে।  

আর বাবুটি বলেন, নাকি বৈদিক সাহিত্যে বাঙালির কোনো উল্লেখই নেই!  

তার ওপর, পুণ্ড্র, তাম্রলিপ্তি আর বঙ্গ অঞ্চলের রাজাদের মহাভারতে পরিষ্কারভাবে বিশুদ্ধ ক্ষত্রিয় বলা হয়েছে।  

ওনারা স্বয়ংবর সভা থেকে শুরু করে রাজসূয় যজ্ঞ — সব বৈদিক আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন।  

আর আর্যবর্তের সংজ্ঞা অনুযায়ী বাংলা পুরোপুরি আর্যভূমির অন্তর্গত।  

শুধু তা-ই নয়, আপনি-আমি যে বাংলা ভাষায় কথা বলি, সেটা নিজেই একেবারে খাঁটি আর্যভাষা।  

অর্থাৎ কী দাঁড়াল?  

বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি — সবকিছুর গোড়ায় রয়েছে হিন্দু ও বৈদিক সভ্যতার শক্ত শিকড়।  

ওটা বাদ দিলে বাংলা বলে কিছুই থাকত না।


Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গে রামনবমী

প্রায় কিছু বৎসর পূর্ব হইতে দেখছি যীশু-পূজা, রমজান, ঈদ পালন করা কলকাতার বাবুগণ রামনবমী পালন হতে দেখিলে ত্রাহি ত্রাহি রব তোলেন। অবশ্য এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে—রামের প্রভাব বাড়িলে তাঁদের বেল্লাপনা বন্ধ হইবে। বঙ্গীয় সংস্কৃতির উপর আরব ও ইউরোপীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধ হবে। কিন্তু সরাসরি ভারত সম্রাটের বিরোধিতা করিলে, পাছে বাঙালি ক্ষেপে গিয়ে জুতোপেটা করে, তাই ভয়ে ভয়ে এখন বলছে—"রামনবমী বাংলার সংস্কৃতিতে ছিল না, বাঙালি এই অবাঙালি আগ্রাসন মানবে না…" ইত্যাদি ইত্যাদি। কেহ কেহ আবার হুতুম পেঁচার নকশা হইতে দেখাইতেছেন রামলীলাকে খোট্টা উৎসব বলে। তাঁরা লিখছেন—বাঙালির রাম বলতে রামমোহন ও রামকৃষ্ণ। এদের মতো নিরেট মাথামোটা বিশ্বভ্রমণ করলেও অল্পই মিলবে। রামমোহন নিজ পত্রের অন্তে পরিচয় হিসাবে নিজেকে "শ্রী রামের দাস" হিসেবে উল্লেখ করেন। আর রামকৃষ্ণ ঠাকুরের কুলদেবতা তো স্বয়ং রঘুবীর। এসব নয়, পরে আলোচনা করা যাবে। আগেও বহুবার বলেছি—কলকাতার বাবুদের বাংলা সম্পর্কে ধারণা কম। তাই Xmas বাঙালির উৎসব আর রামনবমী অবাঙালি হয়ে যায়! মেদিনীপুর, বীরভূম প্রভৃতি জেলায় বহু ৩০০-৪০০ বছর পুরোনো রাম মন্দির( আরও জানতে )দে...

বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য: আর্য-অনার্য বিতর্কের ঐতিহাসিক সত্য

প্রাচীন শাস্ত্র ও ঐতিহাসিক দলিলে বারবার "বঙ্গ" শব্দের উল্লেখ থাকলেও "বাংলা" শব্দটি অনুপস্থিত। নাম নিয়ে অনেকের ধারণা থাকতে পারে, "নামে কী বা আসে যায়?" কিন্তু এখানে নামের গুরুত্ব ঐতিহাসিক সত্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ঐতিহাসিক প্রমাণ অনুযায়ী, প্রাচীন বঙ্গ আজকের সম্পূর্ণ বাংলা অঞ্চলকে নির্দেশ করে না। মহাভারতের যুগে তমলুক, পুণ্ড্র এবং অঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রাচীনকালে বঙ্গ একটি স্বতন্ত্র ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক সত্তা ছিল, যা আজকের বাংলার সঙ্গে পুরোপুরি একীভূত নয়। দাবির বিশ্লেষণ: বঙ্গ কি অনার্য ভূমি? অনেকে দাবি করেন যে, বাঙালায় বাইরের কেউ এলে তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো, কারণ বঙ্গ অনার্য ভূমি। এই তথ্য বৌধ্যায়ন ধর্মসূত্রে পাওয়া যায়। কিন্তু এখানেই বিভ্রান্তি রয়েছে।  "কারণ বঙ্গ অনার্যভূমি" এই উল্লেখ নেই। ওটা বামপন্থীদের কল্পনা। বৌধ্যায়ন ধর্মসূত্রে যা বলা হয়েছে, তা ব্রাহ্মণদের জন্য প্রযোজ্য: [শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ বলেছি তার কারণ হলো, পরবর্তীতে অনেক রাজা বঙ্গের রাজাদের সাথে যুদ্ধে, বিবাহ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এসেছিলেন। তারা প্রা...

আর্যাবর্তের প্রকৃত সংজ্ঞা: শাস্ত্র কি বলে?

একসময় যে বাংলায় রঘুনাথ স্মার্তি ও মধুসূদন সরস্বতীর মতো শাস্ত্রজ্ঞানীরা বিরাজমান ছিলেন, সেই বাংলায় আজ হিন্দু ধর্ম নিয়ে নানা মিথ্যাচার চলছে। এটা চলতে পারার মূলত দুটো কারণ রয়েছে। এক, গ্রামের শাস্ত্রজ্ঞানী ব্রাহ্মণরা সামাজিক মাধ্যম চালাতে জানেন না। দুই, বিগত ৪০ বছরের নাস্তিক শাসন হিন্দুদের থেকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ কেড়ে নিয়ে সেগুলো চরম হিন্দুবিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছে। তবুও, পরম্পরাগত হিন্দুরা আবার নিজেদের জায়গা করে নিতে শুরু করেছে। আজকের আলোচনার বিষয় আর্যাবর্তের সীমারেখা। নানা সময়ে বিতর্কে দেখেছি, এই আর্যাবর্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তথাকথিত ডানপন্থী হিন্দুরা হয় অস্বস্তিতে পড়েন, নয়তো এড়িয়ে যান। স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেন না। দেখুন, শাস্ত্রে আর্যবর্তের তিন প্রকার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমি একে একে বলছি: ১.মনুস্মৃতির দ্বিতীয় অধ্যায়ের বাইশতম শ্লোকটি দেখুন।এই শ্লোক অনুযায়ী, আজকের পুরো ভারতই আর্যাবর্ত। শুধু তাই নয়, বশিষ্ঠ ধর্মসূত্রের (1.9) প্রথম অধ্যায়ে মনুস্মৃতির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। বশিষ্ঠ ধর্মসূত্রে বলা হয়েছে যে হিমালয়ের দক্ষিণ পর্যন্ত আর্যাবর্ত প্রসারিত।(বাংলা হিমালয়ের দক...