Skip to main content

সুভাষচন্দ্র বসু বনাম মনুস্মৃতি

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তার চিঠিপত্র ও লেখনীতে বারবার  রামায়ণ ও মহাভারত-এর উল্লেখ করেছেন। তিনি কখনো কখনো আক্ষেপ করে মাকে লেখা চিঠিতে বলেছেন,  

"দেখুন না, সেই ধর্মপ্রাণ আর্যজাতির বংশধর এখন কিরূপ বিধর্মী ও নাস্তিক হইয়া পড়িয়াছে।"

নেতাজির দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতকে বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হিন্দু ধর্মের প্রসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি মনে করতেন, দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করলেই জাতীয় ঐক্য ও উন্নয়ন সম্ভব। 


 আজকের দিনে যখন কিছু মানুষ মনুস্মৃতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছে, এবং সেটি এমন একজনের অনুপ্রেরণায় যে একসময় ব্রিটিশ শাসনকে সমর্থন করেছিলেন, তখন বঙ্গবীর সুভাষচন্দ্র বসুর মনুস্মৃতি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।  

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছাত্র সমাজকে মনুস্মৃতির নির্দেশনা অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার মতে, এই প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র জাতীয় পুনরুজ্জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যদিও কেউ কেউ দাবি করেন যে মনুস্মৃতিতে কিছু বিতর্কিত অংশ রয়েছে, এর ভালো দিকগুলোর প্রভাব অনেক বেশি গভীর।  

শুধু সুভাষ বসুই নন, বিখ্যাত দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিটশেও মনুস্মৃতিকে তার সমকালীন সমস্ত ধর্মগ্রন্থের চেয়ে উৎকৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন। তার বিখ্যাত উক্তি:  

"বাইবেল ছেড়ে মানুস্মৃতি অনুসরণ করো।"

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু শুধু ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না, তিনি একে ভারতের ভবিষ্যতের ভিত্তি হিসেবে দেখতেন। মানুস্মৃতির ভালো দিকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি ছাত্র সমাজকে এই গ্রন্থ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, আমাদের উচিত নেতাজির দৃষ্টিভঙ্গি ও দেশপ্রেমকে স্মরণ করে প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান ও সংস্কৃতিকে পুনরুদ্ধার করা

Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গে রামনবমী

প্রায় কিছু বৎসর পূর্ব হইতে দেখছি যীশু-পূজা, রমজান, ঈদ পালন করা কলকাতার বাবুগণ রামনবমী পালন হতে দেখিলে ত্রাহি ত্রাহি রব তোলেন। অবশ্য এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে—রামের প্রভাব বাড়িলে তাঁদের বেল্লাপনা বন্ধ হইবে। বঙ্গীয় সংস্কৃতির উপর আরব ও ইউরোপীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধ হবে। কিন্তু সরাসরি ভারত সম্রাটের বিরোধিতা করিলে, পাছে বাঙালি ক্ষেপে গিয়ে জুতোপেটা করে, তাই ভয়ে ভয়ে এখন বলছে—"রামনবমী বাংলার সংস্কৃতিতে ছিল না, বাঙালি এই অবাঙালি আগ্রাসন মানবে না…" ইত্যাদি ইত্যাদি। কেহ কেহ আবার হুতুম পেঁচার নকশা হইতে দেখাইতেছেন রামলীলাকে খোট্টা উৎসব বলে। তাঁরা লিখছেন—বাঙালির রাম বলতে রামমোহন ও রামকৃষ্ণ। এদের মতো নিরেট মাথামোটা বিশ্বভ্রমণ করলেও অল্পই মিলবে। রামমোহন নিজ পত্রের অন্তে পরিচয় হিসাবে নিজেকে "শ্রী রামের দাস" হিসেবে উল্লেখ করেন। আর রামকৃষ্ণ ঠাকুরের কুলদেবতা তো স্বয়ং রঘুবীর। এসব নয়, পরে আলোচনা করা যাবে। আগেও বহুবার বলেছি—কলকাতার বাবুদের বাংলা সম্পর্কে ধারণা কম। তাই Xmas বাঙালির উৎসব আর রামনবমী অবাঙালি হয়ে যায়! মেদিনীপুর, বীরভূম প্রভৃতি জেলায় বহু ৩০০-৪০০ বছর পুরোনো রাম মন্দির( আরও জানতে )দে...

বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য: আর্য-অনার্য বিতর্কের ঐতিহাসিক সত্য

প্রাচীন শাস্ত্র ও ঐতিহাসিক দলিলে বারবার "বঙ্গ" শব্দের উল্লেখ থাকলেও "বাংলা" শব্দটি অনুপস্থিত। নাম নিয়ে অনেকের ধারণা থাকতে পারে, "নামে কী বা আসে যায়?" কিন্তু এখানে নামের গুরুত্ব ঐতিহাসিক সত্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ঐতিহাসিক প্রমাণ অনুযায়ী, প্রাচীন বঙ্গ আজকের সম্পূর্ণ বাংলা অঞ্চলকে নির্দেশ করে না। মহাভারতের যুগে তমলুক, পুণ্ড্র এবং অঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রাচীনকালে বঙ্গ একটি স্বতন্ত্র ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক সত্তা ছিল, যা আজকের বাংলার সঙ্গে পুরোপুরি একীভূত নয়। দাবির বিশ্লেষণ: বঙ্গ কি অনার্য ভূমি? অনেকে দাবি করেন যে, বাঙালায় বাইরের কেউ এলে তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো, কারণ বঙ্গ অনার্য ভূমি। এই তথ্য বৌধ্যায়ন ধর্মসূত্রে পাওয়া যায়। কিন্তু এখানেই বিভ্রান্তি রয়েছে।  "কারণ বঙ্গ অনার্যভূমি" এই উল্লেখ নেই। ওটা বামপন্থীদের কল্পনা। বৌধ্যায়ন ধর্মসূত্রে যা বলা হয়েছে, তা ব্রাহ্মণদের জন্য প্রযোজ্য: [শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ বলেছি তার কারণ হলো, পরবর্তীতে অনেক রাজা বঙ্গের রাজাদের সাথে যুদ্ধে, বিবাহ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এসেছিলেন। তারা প্রা...

আর্যাবর্তের প্রকৃত সংজ্ঞা: শাস্ত্র কি বলে?

একসময় যে বাংলায় রঘুনাথ স্মার্তি ও মধুসূদন সরস্বতীর মতো শাস্ত্রজ্ঞানীরা বিরাজমান ছিলেন, সেই বাংলায় আজ হিন্দু ধর্ম নিয়ে নানা মিথ্যাচার চলছে। এটা চলতে পারার মূলত দুটো কারণ রয়েছে। এক, গ্রামের শাস্ত্রজ্ঞানী ব্রাহ্মণরা সামাজিক মাধ্যম চালাতে জানেন না। দুই, বিগত ৪০ বছরের নাস্তিক শাসন হিন্দুদের থেকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ কেড়ে নিয়ে সেগুলো চরম হিন্দুবিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছে। তবুও, পরম্পরাগত হিন্দুরা আবার নিজেদের জায়গা করে নিতে শুরু করেছে। আজকের আলোচনার বিষয় আর্যাবর্তের সীমারেখা। নানা সময়ে বিতর্কে দেখেছি, এই আর্যাবর্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তথাকথিত ডানপন্থী হিন্দুরা হয় অস্বস্তিতে পড়েন, নয়তো এড়িয়ে যান। স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেন না। দেখুন, শাস্ত্রে আর্যবর্তের তিন প্রকার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমি একে একে বলছি: ১.মনুস্মৃতির দ্বিতীয় অধ্যায়ের বাইশতম শ্লোকটি দেখুন।এই শ্লোক অনুযায়ী, আজকের পুরো ভারতই আর্যাবর্ত। শুধু তাই নয়, বশিষ্ঠ ধর্মসূত্রের (1.9) প্রথম অধ্যায়ে মনুস্মৃতির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। বশিষ্ঠ ধর্মসূত্রে বলা হয়েছে যে হিমালয়ের দক্ষিণ পর্যন্ত আর্যাবর্ত প্রসারিত।(বাংলা হিমালয়ের দক...